Jugersathi

শতবর্ষী বিদ্যালয়ের চারিদিকে থৈথৈ পানি: জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলছে স্কুলে আসা-যাওয়া

স্টাফ রিপোর্টার

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার ২৪ নং সোনাসুর সরকরি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চারিদিকে থৈথৈ পানি। তারইমাঝে ঠায় দাড়িয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন। ১৯১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থী সংখ্যা ৮৭ জন, আর শিক্ষক রয়েছেন ৪ জন।

গ্রামে একটি প্রবাদ রয়েছে, না চলে নাও না চলে পাও, এই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিস্থিতি অনেকটাই এরকম। স্কুলে যাওয়ার জন্য নেই কোন রাস্তা। বর্ষার ভরা মৌসুমে জীবনের ঝুকি নিয়ে নৌকা ও বর্ষার শেষের দিকে পানি কাদা মাড়িয়ে স্কুলে যাওয়া আশা করতে হয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের। স্থলভাগ না থাকায় ক্লাস রুমেই চলছে শিক্ষার্থীদের সমাবেশ বা এ্যাসেম্বিলি।

আষাঢ়, শ্রাবন, ভাদ্র, আশ্বিন ও কার্তিক বছরের এ ৫ মাসই থাকে জলমগ্ন। যাতায়াতের জন্য রাস্তা না থাকায় স্কুলটি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই বর্ষার ভরা মৌসুমে অনেকটা জীবনের ঝুকি নিয়ে যাতায়াত করতে হয় আশপাশে থাকা বাড়িগুলোর নৌকায়। বর্ষার শেষের দিকে কোথাও হাটু সমান কাদা আর পানি মাড়িয়ে আবার কোথাও নৌকায় পার হয়ে যেতে হয় স্কুলে। একারনে বর্ষা মৌসুমে কমে যায় শিক্ষার্থী উপস্থিতি। এ কারনে পিছিয়ে পড়ছে শিক্ষার্থীরা।

এমন পরিস্থিতিতে জ্বর ও সর্দিসহ নানা পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। সঠিক সময়ে বিদ্যালয়ে উপস্থিত হতে পারছেন না শিক্ষকরাও। প্রায়ই ঘটছে নৌকাডুবির মতো ঘটনা। এতে যেমন বর্ষা মৌসুমে শিক্ষার্থী উপস্থিতি কমে যায়, তেমনি দিন দিন কমছে ভর্তি শিক্ষার্থীও। ১’শ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলে আশা এ সমস্যা সমাধানে দ্রুত রাস্তা নির্মানের দাবী শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের।

৫ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ফেরদাউস মোল্লা বলেন, প্রতিদিন নৌকায় করে স্কুলে আসতে হয়। এতে আমাদের অনেক অসু্বিধা হয়। মাঝে মধ্যে পানির মধ্যে পড়ে গিয়ে জামাকাপড় ও বই-খাতা ভিজে যায়। এজন্য আমাদের মাঝে মাঝে সর্দি-জ্বর হয়। আমাদের যাতায়াতের জন্য একটি রাস্তা খুব প্রয়োজন।

৫ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী বর্ষা খানম বলেন, নৌকায় স্কুলে আসতে গিয়ে অনেক সময় দেরি হয়ে যায়। নৌকা যদি এপারে না থাকে তাহলে দাড়িয়ে থাকতে হয় কখন আসবে নৌকা। যারা নৌকা বাইতে পারে না তাদের আরো বেশি অসুবিধা হয়। একটা রাস্তার ব্যবস্থা করে দিলে আমরা সময় মতো স্কুলে যেতে পারবো এবং লেখাপড়া আরো ভালো হবে।

সোনাসুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) শেখ মজিবুর রহমান বলেন, নৌকা দিয়ে স্কুলে যাতায়াতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী উভয়ের অসুবিধা হয়। সময় মতো অনেকে স্কুলে আসতে পারে না। এজন্য পাঠদানে অসুবিধা হচ্ছে। শুধু তাই নয় শিক্ষার্থীর সংখ্যা দিন দিন কমছে। দ্রুত সমস্যা সমাধানের অনুরোধ জানান তিনি।

জেলা প্রশাসক মুহম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, জেলার ৬৭ টি প্রা্থমিক বিদ্যালয়ে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে স্থাপনা নির্মানের প্রকল্প গ্রহন করা হয়েছে। সোনাসুর প্রাথমিক বিদ্যালয় এই প্রকল্পের আওতাভুক্ত। ইতোমধ্যে ওই প্রকল্পের আওতায় যাতায়াতের সমস্যা সমাধানের জন্য রাস্তা নির্মানের কথা বলা হয়েছে। দ্রুত রাস্তা নির্মান করে সমস্যা সমাধান করা হবে।

Scroll to Top