Jugersathi

কোটালীপাড়ায় ২২ ফুট খালে ৭৪ ফুট ব্রিজ নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি

কোটালীপাড়া সংবাদদাতা:

২২ ফুট প্রস্থের ছোট এক খালে নির্মিত হচ্ছে ৭৪ ফুট গার্ডার ব্রিজ। গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় এমন একটি ব্রিজ নির্মাণে অনিয়ম ও দুর্ণীতির অভিযোগ এনে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট লিখিত অভিযোগ করেছে এলাকাবাসী।

অভিযোকারীরা জানান, কোটালীপাড়া উপজেলার পবনার গ্রামের একটি সড়কে ব্রিজ নির্মাণের জন্য পাইল তৈরিতে অনিয়ম করা এবং পাইলের অর্ধেক মাটিতে পুতে বাকি অর্ধেক পাইল কেটে রড কেটেফেলা হচ্ছে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে গোপালগঞ্জ জেলার গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের (২য় সংশোধিত) আওতায় উপজেলার মান্দ্রা খেয়াঘাট থেকে বাপার্ড জাঠিয়া সড়কের ৬ হাজার ৫০ মিটার চেইনেজে ২ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ২২ ফুট প্রস্থের পবনার পাড় খালে ৭৪ ফুট (২২ মিটার) আরসিসি গার্ডার ব্রিজ নির্মানের কার্যাদেশ পায় মেসার্স সৌরভ ট্রেডার্স।

নির্মান কাজের শুরুতেই ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্ণীতির অভিযোগ ওঠায় এলাকাবাসী বারবার উপজেলা প্রকৌশল দপ্তরে অভিযোগ জানানোর পরও কোন প্রতিকার না পেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট অভিযোগ দেয়।

স্থানীয়রা জানান, কার্যাদেশ অনুযায়ী ব্রিজ নির্মাণ হচ্ছে না। ঠিকাদার পাইলিং থেকে রড খুলে বিক্রি করে দিচ্ছে। পাইল তৈরীতেও নেওয়া হয়েছে দুর্নীতির আশ্রয়। নিম্নমানের পাথর, অর্ধেক পরিমান রিং ও পরিমানের চেয়ে কম সিমেন্ট দিয়ে তৈরি করা হয়েছে পাইল। যে কারনে মাটির নিচে অর্ধেক পাইল ঢুকতেই পাইলের বাকি অংশ ভেঙ্গে যাচ্ছে। পরবর্তীতে ঠিকাদারের লোকজন বাকি অর্ধেক পাইলের রড কেটে ফেলছে।

পবনার পাড় গ্রামের কলেজ ছাত্র রকিবুল ইসলাম বলেন, ব্রিজটি নির্মানে অনিয়মের বিষয়ে ঠিকাদারের লোকজনদের বললে তারা নিয়মমতো কাজ করছেন বলে বুঝিয়ে দেয়। অন্যদিকে বেশি বাড়াবাড়ি করলে চাদাঁবাজি মামলারও ভয় দেখায়। এ বিষয়ে উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার অফিসের লোকদের বলেও কোন কাজ না হওয়ায় গত ৭ অক্টোবর ব্রিজ নির্মাণে অনিয়ম ও দুর্ণীতির অভিযোগে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট লিখিত আবেদন করেছি।

নির্মাণাধীন ব্রিজ সংলগ্ন বাসিন্দা মফিজ শেখ বলেন, মানুষের হাটা-চলাচলের জন্য জাঠিয়া থেকে রাধাগঞ্জ গ্রামীন এলাকায় শৈলদা নদীর পাড়ে মাটির রাস্তা হচ্ছে। সেই রাস্তাটিতে ৬ টি সরু খালে ব্রিজ নির্মাণ করছে এলজিইডি। ছোট ছোট খালগুলোতে ৩০ থেকে ৪০ লক্ষ টাকার এক একটি কালভার্ট দিলেই যেখানে হয় সেখানে ৩ থেকে ৫ কোটি টাকার বিশাল গার্ডার ব্রিজ নির্মাণ করা হচ্ছে। এই রাস্তা দিয়ে কখনও বাস গাড়ি চলাচলের সুযোগ নেই। তাহলে এতো বড় ব্রিজ কাদের স্বার্থে? অন্যদিকে এই ব্রিজ নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি হচ্ছে। এভাবে ব্রিজ হলে তা কতদিন টেকসই হবে? এলজিইডি অফিসের দুর্নীবাজ কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে কাজে ব্যাপক অনিয়ম করছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় ব্রিজের পাইল গাড়ার কাজ চলছে। ৬৪ টি পাইলের ৬০ টি পাইল স্থাপন করা হয়েছে। তবে প্রত্যেকটি পাইলের অর্ধেক পাইল মাটির নিচে ঢুকানোর পর বাকি অর্ধেক পাইল কেটে রড বের করছে ঠিকাদারের লোকজন। পাইলের রড কাটার জন্য ৩ জন শ্রমিক কাজ করছেন। আনোয়ার সরদার নামের এক শ্রমিক বলেন, তিনি খুলনা থেকে এসেছেন। তার সাথে আরো দুজন রয়েছেন। তাদের কাজ মাটির উপরের থাকা অশেংর পাইলের রড় বের করে আলাদা করা।

এদিকে কাজের ধীরগতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করে পবনারপাড় গ্রামের মফিজ তালুকদার বলেন, গত বছরের ১৬ অক্টোবর কাজ শুরু হয়। শেষ হওয়ার কথা ছিল সেপ্টেম্বরের ৬ তারিখে। অথচ নির্মাণ কাজের ১০ ভাগ এখনও সম্পন্ন হয়নি।

মেসার্স সৌরভ ট্রেডার্সের সত্ত্বাধিকারী মো: মুরসালিন সৌরভের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি ব্যস্ত রয়েছেন জানিয়ে কোন কথা বলেননি।

কাজের অনিয়মেয়র বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী শফিউল আজম বলেন, ব্রিজের পাইল থেকে রড কেটে নেওয়ার বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি। উদ্ধর্তন কতৃপক্ষকে বিষয়টি অবগত করা হয়েছে। তারা এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিবে। ব্রিজের নির্মাণ মেয়াদ শেষ হলেও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করেছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাগুফতা হক বলেন, ব্রিজের অনিয়মের অভিযোগটি উপজেলা প্রকৌশলীকে দেওয়া হয়েছে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্তা গ্রহণের জন্য।

 

 

Scroll to Top